Full Tilt

 13th June, 2025 

A Bengali translation for my fellow Bengalis who do not enjoy reading in English 

আমার দশম জন্মদিনে, কাকতালীয় ভাবে একটা সাইকেল আর একটা মানচিত্রের বই একসাথে উপহার পেয়েছিলাম। এর কয়েকদিনের মধ্যেই ঠিক করে ফেললাম যে আমি সাইকেল চালিয়ে ভারতবর্ষে যাবো। কাউন্টি ওয়াটারফোর্ডের লিসমরের ছোটো পাহাড়টার ঠিক যে জায়গাটায় বসে এটা আমি ঠিক করেছিলাম সেটা আমার এখনও পরিষ্কার মনে আছে। আমার তখনও মনে হয়েছিল এবং এখনো মনে হয় যে এটা বেশ যুক্তিপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত, কারণ আমি আবিষ্কার করেছিলাম যে সাইকেল চালানোটা যাতায়াতের জন্য একটা অত্যন্ত আনন্দ দায়ক কাজ আর (রাজনৈতিক কারণে সোভিয়েট যুক্তরাষ্ট্র বাদ দিয়ে) অন্যান্য কোথাও যাওয়ার চেয়ে ভারতে যাওয়ার রাস্তাটাই সবচেয়ে কম জলের বাধা  পেরিয়ে সব চেয়ে বেশী দূরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত।


আমি বেশ চালাক মেয়ে ছিলাম। তাই আমার এই উচ্চাশাটা আর কাউকে না জানিয়ে নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলাম। তাতে বড়োদের একটা বাচ্চা কে প্রবোধ দেওয়া সুলভ হাসিটা  এড়ানো যায়। আমি মোটেও চাইনি কেউ আমার পিঠে হাত বুলিয়ে বলুক যে না না এটা শুধুই একটা ক্ষনিকের স্বপ্ন, কিছু দিন পরে কেটে যাবে। আমি জানতাম একদিন আমি সাইকেলে ভারতবর্ষ যাবোই। 


সেটা ছিল ১৯৪১ এর ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে। আর ১৯৬৩র ১৪ই জানুয়ারি আমি ডানকার্ক থেকে দিল্লীর উদ্দেশ্যে সাইকেল চালানো শুরু করি। 


আমার প্রস্তুতি খুবই সাধারণ ছিল। সাইকেলে কোথাও যাওয়ার একটা সুবিধে হলো এতে স্বাভাবিকতই  একটা বিশাল আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের কোনো  প্রয়োজন হয় না। আমার একটা খুব সুন্দর ছেলেদের আর্মস্ট্রং ক্যাডেট সাইকেল ছিল। ওর নাম ছিল রোজিনান্তে। কিন্তু আমি ডাকতাম রোজ বলে। আমি ওকে কিনেছিলাম ১৪ই জানুয়ারি ১৯৬১তে আর এটাও কাকতালীয় যে আমার যাত্রা শুরু হয় ১৪ই জানুয়ারি ১৯৬৩ তে অর্থাৎ ওর দ্বিতীয় জন্মদিনে। এটা বেশ ভালোই হয়েছিল। কারণ ততদিনে আমরা একটা বেশ সুন্দর টীম তৈরী হয়ে গেছিলাম। এই কদিনে আমরা বেশ কয়েক হাজার কিলোমিটার একসাথে ঘুরে ফেলেছি আর ও-ও বেশ অল্প বয়সী ছিল যে নির্ভর করা যায়। ওর একটাই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ওর তিন গীয়ারের ডিরেইলারটা খুলিয়ে ফেলেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল ওটা এশিয়ার রাস্তার পক্ষে একটু কমজোরি হয়ে যেতে পারে। সাধারণ সাইকেলের জিনিসপত্র ছাড়া - যেমন সিটের তলার ব্যাগ, ঘন্টা, আলো আর পাম্প - ওর একটা পেছনে ব্যাগ লাগানোর ব্যবস্থা ছিল। কিছু না চাপানো অবস্থায় ওর ওজন ছিল ৩৭ পাউন্ড আর মালপত্রের ওজন ছিল ২৮ পাউন্ড। আমি পিঠের একটা পিট্টু ব্যাগে আরও ৬ পাউন্ড জিনিস নিয়েছিলাম (আমার জিনিসপত্রের একটা লিস্ট শেষের দিকে দিয়েছি) আয়ারল্যান্ড ছাড়ার আগে চারটে টায়ার রাস্তায় পড়বে  এমন বিভিন্ন ব্রিটিশ এমব্যাসি, হাই কমিশন বা কন্সুলেটে পাঠিয়ে রেখেছিলাম। রোজের লাগে ২৭ ১/২" x ১ ১/৪" টায়ার। এই সাইজ গুলো বিদেশে চট করে নাও পাওয়া যেতে পারে। 


লন্ডনে ১৯৬২র নভেম্বরের শেষের দিকে আমি বেশ সহজেই যুগোস্লাভিয়া আর বুলগেরিয়ার ভিসা পেয়ে গেছিলাম। আমি ঠিক করেছিলাম যে পার্শিয়ার ভিসা আমি ইস্তাম্বুল থেকে নোবো আর আফগানিস্তানের ভিসা তেহেরান থেকে। ওই একই সঙ্গে লন্ডন থেকে স্মল পক্স, কলেরা, টাইফয়েড আর ইয়েলো ফিভার এর টিকা নিয়ে নিয়েছিলাম। শেষের টা নিয়েছিলাম এই ভেবে যে যদি ভারতবর্ষ থেকে আফ্রিকা হয়ে ফিরি। 


পরের কয়েক মাসের বেশিরভাগ সময় কাটলো ডাবলিনের AA থেকে জোগাড় করা ম্যাপ ঘেঁটে। আমি বিভিন্ন ছোট শহরের মধ্যে দূরত্ব মেপে বার করছিলাম। তাদের বেশিরভাগেরই নেশা ধরানো অদ্ভুত সব নাম। আমার হিসেব অনুযায়ী ডানকার্ক থেকে পেশাওয়ারের দূরত্ব এলো ৪৪৪৫ মাইল আর বছর শেষ হবার দিনে আমি  আপনাকে নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারতাম যে ১৪ই জানুয়ারি থেকে ১৪ই মে' র মধ্যে কোনদিন আমি কোথায় থাকবো। ওই দিন আমার পেশাওয়ার পৌঁছনোর কথা। এই পুরো কাজটা করার একটাই উদ্দেশ্য ছিল যে রাস্তায় ব্রিটিশ কাউন্সিল অফিস কে পাঠানো জিনিস গুলো যেন আমার পরে না পৌঁছয়। রাস্তায় নেবে অনিবার্য ভাবে মূল পরিকল্পনায় বিভিন্ন পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও সেটা কিন্তু কখনোই হয় নি। 


ম্যাপ ঘাঁটার ফাঁকে ফাঁকে আমি লিসমরের পাহাড়ের প্রত্যন্ত ফাঁকা জায়গায় গিয়ে গিয়ে আমার   .২৫ টা চালানো আর গুলি ভরা প্র্যাক্টিস  করতাম। এটা আমি সম্প্রতি স্থানীয় পুলিশের সম্পূর্ণ সহায়তায় কিনেছিলাম। যদিও ওনারা গভীর বিস্ময়ের সাথে সেটা করেন। আমার বন্ধুরা অবশ্য এটা কে কৈশোরের অতিনাটকীয়তা হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। একটা গুলি ভরা বন্দুক নিয়ে চলা ফেরা করা যাতে আমার অভ্যাস হয়ে যায় তাই জামার তলায় স্ল্যাক্সের ডান পকেটে এটা নিয়ে ঘুরতাম। তবে এতে অন্যদের চেয়ে আমি নিজে অনেক বেশী ভয় পেতাম। কিন্তু বাড়ি ছাড়ার এক মাসের মধ্যে আপাতঃ শিশু সুলভ কাজটার  - পকেট থেকে চট করে বন্দুক বার করে তার সেফটি ক্যাচ খোলা রপ্ত করা - উপকারিতা বেশ বোঝা গেছিল। 

দিল্লি আমি পৌঁছোই ১৮ই জুলাই ১৯৬৩। আয়ারল্যান্ড ছাড়ার প্রায় ছ মাস পরে। যারা একটু অঙ্ক মস্তিষ্কের তারা সবসময়ে জানতে চায় যে এ কদিনে ঠিক কতটা আমি চালিয়েছিলাম আর দিনে গড় কতটা করে ইত্যাদি। দুর্ভাগ্যবশত দূরত্ব মাপার যন্ত্র গুলো এশিয়ার রাস্তায় খুব একটা কাজ করে না। কাজেই আমি মোটামুটি একটা আন্দাজে বলতে পারি রোজ আর আমি দুজনে মিলে মুরি আর গিলগিটের ঘুরে পথ নিয়ে মাইল তিন হাজার মাইল মতো চালিয়েছিলাম। এর থেকে আন্দাজ করতে পারেন যে আমাদের মোটামুটি দৈনিক কতটা চালাতে হয়েছিল। কিন্তু এই হিসেবে একটু ভুল হবে কারণ অনেক দিন এমনও ছিল যখন আমরা কোথাও না গিয়ে একই জায়গায় ছিলাম। আমার ধারণা সব চেয়ে কম চালিয়েছিলাম যেদিন সেটা ছিল ১৯ মাইল আর সব চেয়ে বেশী ছিল ১১৮ মাইল। তবে মোটামুটি আমার মনে হয় যখন চালিয়েছি গড়ে ৭০ থেকে ৮০ মাইল দিনে চালিয়েছি। 


আমার মনে হয় এখানে একটা কথা বলার সময় এসেছে। একটা চলতি ধারণা কে খণ্ডন করা দরকার। অনেকেই ভাবেন একজন একা মহিলা যিনি এই ধরনের একটা যাত্রা করেন তিনি নিশ্চই 'খুব সাহসী'। এপিকটেটাস খুব অল্প কথায় এটা বলেছেন - মৃত্যু বা কষ্ট যত না ভয়ংকর, মৃত্যু বা কষ্টের ভীতি টা তার চেয়েও বেশী ভয়ঙ্কর। যেহেতু দৈহিক বিপদের চিন্তা আমায় ততটা ভয় পাওয়ায় না তাই সাহসের কোনো প্রয়োজন নেই; একটা লোক যদি আমায় আক্রমণ করে বা ডাকাতি করতে চায় বা প্রচণ্ড ক্লান্ত অবস্থায় সন্ধ্যে নেবে আসছে আর আমি কোমর অবধি বরফে একটা পাসে ওঠার মাঝ পথে আছি - তখন আমার ভয় লাগে। কিন্তু এই অবস্থায় ভয়ের চেয়েও নিজেকে বাঁচানোর চিন্তাটাই সর্বগ্রাসী হয়ে দেখা দেয়। 


এই যাত্রার প্রথম দু মাস আমি আমার চার প্রাণের বন্ধুকে চিঠি লিখে আমার এগোনোর খাবার দিতে থাকি কিন্তু এটা একটা সাংঘাতিক কঠিন কাজ ছিল। তাই তেহরান থেকে আমি বেশির ভাগ পরিব্রাজকের মতো ডায়েরি লেখা শুরু করি। আর যখনই রাস্তায় একটা বিশ্বাসযোগ্য পোস্ট অফিস দেখতাম এগুলো কিস্তিতে বাড়ি পাঠানো শুরু করি। বন্ধুরা দেশে এগুলো নিজেদের মধ্যে দেয়া নেওয়া করে পড়তো আর শেষ জন সেগুলো পাণ্ডুলিপি হিসেবে রেখে দিতো "ভবিষ্যত" এর  জন্য। এই বইটা সেই ভবিষ্যৎ। 


দিনের শেষে আধো ঘুমে লেখার সময় বানান আর বাক্য গুলো একটু ঘেঁটে যায়। সেগুলো ঠিক করা ও গুছিয়ে লেখা ছাড়া আমি ওই ডায়েরি টা প্রায় অপরিবর্তিত রেখেছি। 

Comments

Popular posts from this blog

The Trekking Things